পরীক্ষণ হলো বিজ্ঞানের নতুন জ্ঞান পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য একজন বিজ্ঞানী প্রথমে জানা বা বিদ্যমান তথ্যের আলোকে একটি আনুমানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি পরীক্ষণের মাধ্যমে ঐ অনুমিত সিদ্ধান্ত ঠিক হয়েছে কিনা তা যাচাই করেন। পরীক্ষণের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যদি দেখা যায় অনুমিত সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না তাহলে তিনি নতুন করে অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তারপর আবার তা পরীক্ষণের মাধ্যমে যাচাই করেন। অধিকাংশ পরীক্ষণ পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এতে সকল কিছু স্থির রেখে একটি মাত্র চলক পরিবর্তন করা হয়। নিচে পরীক্ষণ পদ্ধতির ধাপসহ একটি উদাহরণ দেওয়া হলো।
পরীক্ষণ: বেঁচে থাকার জন্য গাছের পানি দরকার কিনা তার পরীক্ষা।
পরীক্ষণটি করতে যা যা দরকার: ছোটো দুটি পাত্র, ফুলগাছের দুটি চারা, পানি ও শুকনা মাটি।
পদ্ধতি:
১. সমস্যা নির্ধারণ: পরীক্ষণ পদ্ধতির প্রথম ধাপে তোমরা সমস্যা স্থির করলে-ফুলগাছের চারা তুলে এনে লাগালে মারা যাচ্ছে কেন?
২. জানা তথ্য সংগ্রহ: তোমরা বই পড়ে, শিক্ষককে বা পিতামাতাকে জিজ্ঞাসা করে জানার চেষ্টা করলে কেন চারাগাছ মারা যেতে পারে। তোমরা জানলে যে পানি না পেলে চারাগাছ মারা যেতে পারে।
৩. আনুমানিক/অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ (সম্ভাব্য ফলাফল) জানা তথ্য থেকে তোমরা অনুমিত সিদ্ধান্ত নিলে-পানির অভাবে চারাগাছ মারা যায়।
৪. পরীক্ষণের পরিকল্পনা এবার তোমরা পরীক্ষণের পরিকল্পনা করলে। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
যে, এ পরীক্ষার জন্য তোমাদের দুটি পাত্রে দুটি গাছ নিতে হবে। তোমরা কেবল দুটি পাত্রের মধ্যে একটি বিষয়ে পার্থক্য রাখতে পারবে। অন্যসব কিছু সমান সমান রাখতে হবে। না হলে তোমরা যেটি যাচাই করতে চাও তা করতে পারবে না।
৫. পরীক্ষণ: ছোটো দুটি একই রকমের পাত্র নাও। মাটি বা প্লাস্টিকের টবজাতীয় পাত্র হলে ভালো হয়। পাত্র দুটির তলায় ছোটো ছিদ্র কর। এবার শুকনা মাটি দিয়ে পাত্র দুটি ভরে দাও। এবার একই ধরনের দুটি চারাগাছ দুই পাত্রে রোপণ কর। একটিতে পানি দাও আর একটি শুকনো রাখ। দুটি গাছকে ছায়ায় রেখে দাও। পরের দিন গাছ দুটিকে পর্যবেক্ষণ কর। একটি গাছ প্রায় মরে গেছে, অন্যটি সতেজ আছে। তাই না?
৬. উপাত্ত বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ: দুটি পাত্রে একই ধরনের মাটি ছিল। চারাগাছ দুটিকে পাত্রসহ একই
জায়গায় রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে পার্থক্য ছিল কেবল পানি। একটিতে পানি দেওয়া হয়েছিল, আর একটিকে পানি দেওয়া হয়নি। এ থেকে কী সিদ্ধান্তে আসা যায়? সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে পানি না দেওয়ায় একটি চারা গাছ মরে গেছে।
৭. ফল প্রকাশ: তোমরা তোমাদের পরীক্ষণের ফল বিদ্যালয়ের বুলেটিন বোর্ডে লিখে প্রকাশ করতে পার। উপরোল্লিখিত ধাপগুলো হলো পরীক্ষণ পদ্ধতির ধাপ। এগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিরও ধাপ।